মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় নিয়ে অনলাইনে অনেক পরামর্শই পাওয়া যায়। সুস্থ্য জীবনের জন্য প্রত্যেকটি মানুষেরই শরীরে সঠিক ওজন ধরে রাখা প্রয়োজন। মেয়েদের শরীর অতিরিক্ত ভারী হয়ে গেলে তাদের নানারকম সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। পথে ঘাটে ও বন্ধুদের কাছে হাসির খোরাক হতে হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতার ফলে শরীরে দেখা দেয় নানা শারীরিক, মানসিক ও হরমোনজনিত সমস্যা। তবে দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন জরুরী।
গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিকভাবে ফিট মেয়েদের তুলনায় মোটা মেয়েদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৬৬ শতাংশ বেশি থাকে। অনেকেরই অতিরিক্ত ওজনের জন্য গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও উচ্চরক্তচাপ, ডায়বেটিস, অনিদ্রা, কিডনি সমস্যা, অল্পতে ক্লান্তি বোধ ছাড়াও দেখা দেয় নানা রকম অসুস্থতা। তাই সুস্থ্য থাকতে প্রয়োজন শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও মেদ কমিয়ে নিজেকে ফিটনেস ফিরিয়ে আনা।
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর কয়েকটি উপায় রয়েছে। এই সকল পদ্ধতিগুলির কোনটি আপনি প্রয়োগ করবেন সেটি নির্ভর করবে ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা, ইচ্ছা ও সামর্থ্যের উপর। তবে সব পদ্ধতিই যে সবার জন্য কার্যকর হবে এটি আগে ভাগে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। ব্যক্তি ভেদে ওজন কমানোর পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। তবে আপনার যদি পূর্ব থেকেই কোন শারীরিক জটিলতা থেকে থাকে তবে উল্লেখিত পদ্ধতি প্রয়োগের পূর্বে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
মেয়েদের শরীরের সঠিক ওজন:
মেয়েদের শরীরের গড়ন ও উচ্চতা ভেদে শরীরের আদর্শ ওজন ভিন্ন হয়ে থাকে। বয়সের সাথে সাথে মানুষের ওজন ও আকৃতি বদলাতে থাকে। বাংলাদেশিসহ এশিয় বংশোদ্ভূত নারী-পুরুষ যাদের বিএমআই ২৩ অথবা তার বেশি তাদের বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ (যেমন: ডায়াবেটিসে) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত। সে অনুযায়ী উল্লিখিত জনগোষ্ঠীর কোন উচ্চতায় ওজন কত হওয়া উচিত—তা নিম্নের তালিকায় তুলে ধরা হলো। উচ্চতা অনুপাতে নিম্নোক্ত ওজনকে শরীরের আদর্শ ওজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
উচ্চতা | ওজন সীমা |
---|---|
৪ ফিট ২ ইঞ্চি | ২৯.৮ – ৩৭ কেজি |
৪ ফিট ৩ ইঞ্চি | ৩১.৩ – ৩৮.৮ কেজি |
৪ ফিট ৪ ইঞ্চি | ৩২.২ – ৪০ কেজি |
৪ ফিট ৫ ইঞ্চি | ৩৩.৭ – ৪১.৯ কেজি |
৪ ফিট ৬ ইঞ্চি | ৩৪.৭ – ৪৩.১ কেজি |
৪ ফিট ৭ ইঞ্চি | ৩৬.৩ – ৪৫ কেজি |
৪ ফিট ৮ ইঞ্চি | ৩৭.৩ – ৪৬.৩ কেজি |
৪ ফিট ৯ ইঞ্চি | ৩৯ – ৪৮.৩ কেজি |
৪ ফিট ১০ ইঞ্চি | ৪০ – ৪৯.৭ কেজি |
৪ ফিট ১১ ইঞ্চি | ৪১.৬ – ৫১.৭ কেজি |
৫ ফিট | ৪২.৭ – ৫৩.১ কেজি |
৫ ফিট ১ ইঞ্চি | ৪৪.৪ – ৫৫.২ কেজি |
৫ ফিট ২ ইঞ্চি | ৪৫.৬ – ৫৬.৬ কেজি |
৫ ফিট ৩ ইঞ্চি | ৪৭.৪ – ৫৮.৮ কেজি |
৫ ফিট ৪ ইঞ্চি | ৪৯.২ – ৬১.১ কেজি |
৫ ফিট ৫ ইঞ্চি | ৫০.৪ – ৬২.৬ কেজি |
৫ ফিট ৬ ইঞ্চি | ৫২.২ – ৬৫ কেজি |
৫ ফিট ৭ ইঞ্চি | ৫৩.৫ – ৬৬.৪ কেজি |
৫ ফিট ৮ ইঞ্চি | ৫৫.৪ – ৬৮.৮ কেজি |
৫ ফিট ৯ ইঞ্চি | ৫৬.৭ – ৭০.৪ কেজি |
৫ ফিট ১০ ইঞ্চি | ৫৮.৬ – ৭৩ কেজি |
৫ ফুট ১১ ইঞ্চি | ৬০ – ৭৪.৫ কেজি |
৬ ফুট | ৬২ – ৭৭ কেজি |
৬ ফুট ১ ইঞ্চি | ৬৩.৩ – ৭৮.৭ কেজি |
৬ ফুট ২ ইঞ্চি | ৬৫.৪ – ৮১.৩ কেজি |
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক ওজন কত হওয়া উচিত তা হিসাব করার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এগুলির মাঝে একটি আন্তর্জাতিক সূচক হলো বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই)। এই পদ্ধতির সাহায্যে উচ্চতা অনুযায়ী প্রত্যেকের আদর্শ ওজন নির্ণয় করা যায়। বিএমআই ছাড়াও সঠিক ওজন নির্ণয়ের ভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে রয়েছে—ডেভিন ফর্মুলা ও হাম্যুয়ি মেথড।
আন্তর্জাতিকভাবে বিএমআই যদি ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে হয়, তবে উচ্চতা অনুযায়ী ওজন সঠিক ধরে নেওয়া হয়। নিম্নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা নির্দেশিত বিএমআই (Body Mass Index (BMI)) অনুযায়ী মেয়েদের শরীরের সঠিক ওজনের তালিকা প্রদান করা হলো;
শ্রেণীবিভাগ (Classification) | BMI (kg/m2) | স্থূলতা শ্রেণী (Obesity class) | কোমর (Waist) | কোমর (Waist) |
Women 35 inches or less | Women: 35 inches or more | |||
কম ওজন (Underweight) | 18.4 or less | |||
স্বাস্থ্যকর ওজন (Healthful weight) | 18.5–24.9 | |||
অতিরিক্ত ওজন (Overweight) | 25.0–29.9 | Increased risk | High risk | |
স্থূলতা (Obesity) | 30.0–34.9 | I | High risk | Very high risk |
35.0–39.9 | II | Very high risk | Very high risk | |
চরম স্থূলতা (Extreme obesity) | 40.0+ | III | Extremely high risk | Extremely high risk |
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় সমূহ:
পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রের কাজের চাপের কারণে মেয়েদের শরীরের ওজন কমানো প্রায়শই কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ হয়ে থাকে। তবে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে দ্রুতই ওজন কমানো যায়। ওজন কমানোর জন্য প্রধানত তিনটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। যথাক্রমে-
- ১/ খাবার নিয়ন্ত্রণ বা সঠিক ডায়েট চার্ট অনুসরণ
- ২/ নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা ও কায়িক পরিশ্রম
- ৩/ ওষুধের মাধ্যমে ওজন কমানো
নিম্নে প্রক্রিয়া গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
১/ খাবার নিয়ন্ত্রণ বা সঠিক ডায়েট চার্ট অনুসরণঃ
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ওজন কমানো। অনেকে ভাবেন কম খেলেই বুঝি ওজন কমে যাবে। কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করেন যে তারা কম খাবার পরও তাদের ওজন কমছে না। প্রকৃতপক্ষে কম খাবারের চেয়ে জরুরী পরিমিত পরিমাণে ও পুষ্টিগুণ বিচার করে খাবার গ্রহণ। কম খাবার গ্রহণের ফলে পেট খালি থাকায় ও শরীর পরিমিত মাত্রায় পুষ্টি না পাওয়ায় ওজন না কমে এসিডিটি ও শারীরীক দুর্বলতা দেখা দেয়। কয়েক বেলা কম খাওয়ার ফলে অনেকেই অন্য বেলা আগের থেকেও অতিরিক্ত খাবার খেয়ে নেন। ফলে ওজন অনেক সময় না কমে বরং বেড়ে যায় এবং পাশাপাশি নানা অসুস্থতা শরীরকে আক্রান্ত করে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর গড়ে প্রতিদিন ২২০০ কিলো ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা অতিরিক খাবারের মাধ্যমে তার থেকে বেশি ক্যালোরি শরীরে গ্রহণ করি কিন্তু সেই অনুপাতে শারীরিক পরিশ্রম করি না।

ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে অতিরিক্ত মেদ-চর্বি ও ওজন বৃদ্ধি করে। তাই শারীরিক পরিশ্রম অনুপাতে ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু ধরণের খাবার পরিহার ও কিছু ধরণের খাবার গ্রহণ ভালো ফলাফল এনে দিতে পারে। নিচে ওজন কমানোর খাবার তালিকা কি কি রাখবেন আর কি কি বাদ দেবেন তা উল্ল্যেখ করছি।
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর খাবার তালিকা, কি খাবেন কি খাবেন না
যে ধরণের খাবার গ্রহণ করবেন | যে ধরণের খাবার বর্জন করবেন |
প্রোটিন জাতীয় খাবারঃ বাদাম, চর্বি বিহীন মাংস, ছোট মাছ প্রভৃতি। | শর্করা জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করবেন। যেমন- ভাত, আটার রুটি, ময়দার পরোটা, পাউরিটি ইত্যাদি |
আঁশ জাতীয় খাবার। যেমন- সবুজ শাক-সব্জী, ফলমূল। | চিনি জাতীয় খাবার বর্জন করবেন। যেমন- চিনির শরবত, সফট ড্রিংস, সেমাই, চকলেট, আইসক্রিম মানে যেই খাবারের মধ্যে চিনি রয়েছে তা বর্জন করুণ। |
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। | ফাস্ট ফুড। যেমন- চিকেন ফ্রাই, বার্গার, ফ্রেন্স ফ্লাই প্রভৃতি। |
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পানি পূর্ণ খাবার খেতে হবে। যেমন- লাউ, কুমড়া, শসা প্রভৃতি। | চর্বি জাতীয় খাবারঃ ডোবা তেলে ভাজা খাবার, চর্বি যুক্ত মাংস। |
উদ্ভিজ চর্বি। যেমন- নারকেল | অতিরিক্ত মিস্টি জাতীয় ফল। যেমন-পাকা আম, পাকা কলা। |
টক বা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। যেমন- লেবু, আমড়া, কাঁচা আম প্রভৃতি। |
পানি খেয়ে ওজন কমানোর উপায়:
শুনতে অদ্ভুত শোনালেও মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় গুলির মধ্যে একটি হলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, বিশেষ করে খাবার আগে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়েরাই পানি পান করতে চায় না। পানি রক্তের টক্সিন ও চর্বি বের করে ফেলে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং পরে নিয়মিত পানি পান ওজন কমাতে ও শরীরকে সতেজ রাখতে বেশ কার্যকর। তবে খাওয়া শেষ হবার সাথে সাথে পানি পান করা ঠিক না।ঠিকমত পানি না খাওয়ার জন্য মেয়েরা অনেকেই ডিহাইড্রেশনে ভোগেন।
দৈনিক ৮ আউন্স কাপের ৮ গ্লাস পানি করা দরকার যা প্রায় ২ লিটারের সমান। তবে ভিন্ন গবেষণাতে দেখা গেছে দৈনিক চার লিটার পানি পান করা উত্তম। তবে লিঙ্গ, কাজের ধরন এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে শরীরে পানির চাহিদা ভিন্ন হতে পারে। পাবমেড সেন্ট্রালের একটি গবেষণা অনুসারে, যারা খাবারের আধা ঘন্টা আগে ১/২ লিটার পানি পান করেন, তাদের ওজন ৪৪% বেশি কমে যায় ।

তাই আপনি সত্যিই যদি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান, তবে এই সহজ টিপসটি অনুসরণ করে ফলাফল নিজের চোখেই দেখুন!
মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুনঃ
মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার গুলো শরীরে ইন্সুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর এই ইন্সুলিন হল শরীরে চর্বি সংরক্ষণ করার প্রধান হরমন। শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে গেলে হজম প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। ফলে প্রতিদিনের খাওয়া খাবার গুলো শরীরে জমা থেকে যায় ফলে ওজন বেড়ে যায়। অন্যদিকে ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং শরীর থেকে চর্বির পরিমাণ কমতে থাকে। খাবার থেকে সুগার এবং কার্বোহাইড্রেডের পরিমাণ কমাতে পারলে ইনসুলিনের মাত্রাও কমে আসে এবং অতিরিক্ত ওজন কমে আসে।
ওজন কমানোর জন্য যথেষ্ট ঘুম ও বিশ্রামঃ
পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম উভয়ই ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। সঠিক বিশ্রাম এবং ঘুম ছাড়া, শরীর বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব অনুভব করতে পারে যা ওজন হ্রাস করা কঠিন করে তুলতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ঘেরলিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, যা ক্ষুধাকে উদ্দীপিত করে এবং লেপটিন হরমোনের মাত্রা হ্রাস করে, যা পরিপূর্ণতার সংকেত দেয়। এটি ক্ষুধা এবং খাবারের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়।
ক্ষুধা বৃদ্ধির পাশাপাশি, ঘুমের অভাবও শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাস এবং বিপাক হ্রাসের কারণ হতে পারে। যখন শরীর ক্লান্ত থাকে, তখন এটি শারীরিক কার্যকলাপে নিযুক্ত হওয়ার এবং ক্যালোরি পোড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে থাকে, যা ওজন বাড়াতে পারে।
ওজন কমানোর লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য, প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর এবং বিশ্রামের সময়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে প্রসারিত এবং শিথিল করার জন্য সারা দিন বিরতি নেওয়া, ধ্যান বা যোগব্যায়ামের মতো মানসিক চাপ-হ্রাসকারী ক্রিয়াকলাপগুলিতে জড়িত হওয়া এবং ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এড়ানো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ঘুম এবং বিশ্রামকে অগ্রাধিকার দিয়ে, ব্যক্তিরা ক্ষুধা হ্রাস করে, শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উন্নতি করে তাদের ওজন কমানোর লক্ষ্যগুলিকে সমর্থন করতে পারে।
কিটো ডায়েট এর মাধ্যমে ওজন কমানোঃ
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই কিটো ডায়েট অনুসরণ করে থাকেন। কিন্তু কিটো ডায়েটে যেমন দ্রুত ওজন কমে ঠিক তেমনি এটা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যাও ডেকে আনে। যে কারণে বিশেষজ্ঞরা এই ডায়েট মেনে চলার পরামর্শ কিন্তু মোটেই দেন না।
কিটো ডায়েট হল একটি উচ্চ প্রোটিন এবং কম কার্বোহাইড্রেট ভিত্তিক খাদ্য পদ্ধতি, যা শরীরের জমা থাকা রক্তের গ্লুকোজ ব্যবহার করে শরীরের শক্তি উৎপাদন করে। এই খাদ্য পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হল কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে ওজন কমানো।
কিটো ডায়েট একটি কঠোর ডায়েট পরিচালনা পদ্ধতি এবং এটি সাধারণত অল্প সময়ের জন্য নয়। কারণ এটি শুধুমাত্র প্রোটিন এবং ফ্যাট খাদ্যের দ্বারা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সম্পূর্ণ কমে যায়। তাই কিটো ডায়েট পরিচালনার সময় প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে পানি খাবার প্রয়োজন হয়।
কার্বোহাইড্রেড কম খেতে থাকলে শরীর তখন জমা চর্বি ভেঙ্গে সেখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ওজন কমে যায়। শরীরের সঞ্চিত চর্বির ব্যবহারের ফলে তখন শরীরে একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার মধ্যে মাথা ব্যথা, ব্লাড সুগারের পরিমাণ কমে যাওয়া, ডিহাইড্রেশন, চুল পড়া, অনিদ্রা, কিডনির সমস্যার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই এই ডায়েট শুরু করার সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ যাতে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তিনি সাপ্লিমেন্ট প্রদান করতে পারেন।
ওজন কমানোর হলিস্টিক হেলথ এপ্রোচঃ
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়ের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হচ্ছে হলিস্টিক হেলথ এপ্রোচ।হলিস্টিক হেলথ এপ্রোচ হলো শরীর, মন এবং আত্মার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের এবং সুখের অর্জনের মাধ্যম। একজন ব্যক্তির জীবনের সমস্ত দিকের সমস্যাগুলির সমাধানের মাধ্যমেই একজন ব্যাক্তি সুখী জীবন পেতে পারে।
হলিস্টিক হেলথ এপ্রোচ স্বাস্থ্যকে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে, যেমন- সুস্থ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, শারীরিক ব্যায়াম, ঘুমের নিয়ন্ত্রণ, মানসিক সুস্থতা এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়ন। এটি রোগের মূল কারণটি বুঝে এই অনুযায়ী চিকিত্সা করে। হলিস্টিক স্বাস্থ্য প্রদানকারীগণ প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি ভেষজ ওষুধ, আকুপাংচার এবং ম্যাসেজ থেরাপির মতো প্রাকৃতিক প্রতিকার পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন।
সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মূল নীতিগুলির মধ্যে একটি হল প্রতিরোধের মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা। এর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং অসুস্থতাগুলিকে বিকাশ থেকে রোধ করা। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পছন্দ করা, যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
হোলিস্টিক হেলথ অ্যাপ্রোচ ব্যক্তিদেরকে তাদের শরীর সম্পর্কে অবহিত করে, তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা বোঝার মাধ্যমে এবং সক্রিয়ভাবে তাদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতির উপায় খোঁজার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্যে সক্রিয় ভূমিকা নিতে উৎসাহিত করে। যার ফলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব হয় পাশাপাশি তিনি পান রোগমুক্ত সুস্থ্য জীবন।
আইরিন ওয়েলনেস এর প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকা প্রবাসি হোলিস্টিক হেলথ প্রাক্টিশনার আইরিন নাহার বলেন, তার কাছে অনেকেই আসেন যারা ভুল ডায়েট অনুসরণ করে ওজন কমাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তার পর সুস্থ্যতার জন্য তার কাছে আসেন। কিন্তু প্রথমেই যদি আইরিন ওয়েলনেস এর সেবা গ্রহণ করতেন তবে তাকে এই ভোগান্তি পোহাতে হত না। তাদের নির্দেশিত ডায়েটের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে নিরাপদে ওজন কমানোর পাশাপাশি ব্যক্তি ফিরে পায় সক্রিয় যৌবন। ব্যক্তি বয়স, জাতী, ভৌগোলিক অবস্থান, নির্দিষ্ট অসুস্থতা প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে একজনের জন্য কার্যকর ডায়েট প্লান অন্যজনের জন্য কাজ নাও করতে পারে। তাই ব্যক্তি ভেদে ডায়েট ও ভিন্ন হয়। ফলে যে কোন ডায়েট প্রদানের পূর্বে ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তবেই সঠিক ডায়েট প্লান প্রদান করা সম্ভব।
সংক্ষেপে বলা যায় যে, সামগ্রিক স্বাস্থ্য পদ্ধতি হল স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য একটি ব্যাপক পদ্ধতি। যা অনুসরণ করে একজন শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশী সুস্থ্য এবং সক্রিয় জীবন পেয়ে থাকে।
২/ ওজন কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম:
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম ওজন কমাতে ভীষণ কার্যকর। ব্যায়াম শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি পুড়িয়ে বাড়তি ওজন কমাতে সহায়তা করে। তবে ব্যায়ামের ফলে কত দিনে কতটুকু ওজন কমবে তা নির্ভর করবে আপনার বয়স, ডায়েট এবং শুরুর ওজনের উপর।
ডায়েট পরিবর্তনের পর ব্যায়ামই হচ্ছে মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় গুলির বেশি অধিক জনপ্রিয়। ব্যায়াম ওজন কমানো ছাড়াও শরীরের আরও অনেক উপকার করে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে মন ভালরাখা, শক্তিশালী হাড় তৈরি এবং অনেক ধরণের দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করা।
ওজন কমাতে নিচের এই ৮ (আটটি) ব্যায়াম করতে পারেন।
- ১। হাঁটা (Walking)
- ২। জগিং বা দৌড়ানো (Jogging or running)
- ৩। সাইক্লিং বা বাইসাইকেল চালানো (Cycling)
- ৪। ভারোত্তোলন প্রশিক্ষণ (Weight training)
- ৫। উচ্চ তীব্রতা ব্যবধান প্রশিক্ষণ বা হিট ওয়ার্ক আউট ( high intensity interval training (HIIT))
- ৬। সাঁতার (Swimming)
- ৭। যোগব্যায়াম (Yoga)
- ৮। পাইলেটস ব্যায়াম (Pilates)

৩/ ওষুধের মাধ্যমে ওজন কমানোঃ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে যা মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার ভিতর থেকে কয়েকটি জনপ্রিয় ঔষধ নিম্নে উল্লেখ করছি;

Liraglutide (Saxenda), Tirzepatide (Mounjaro), Naltrexone HCl and bupropion (Contrave), Orlistat (Xenical), Phentermine, Phentermine and topiramate (Qsymia), Semaglutide (Wegovy) প্রভৃতি ঔষধ গুলি ওজন কমাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এগুলি কেবলমাত্র ডাক্তারের তত্ত্বাবধানেই ব্যবহার করা উচিত।
এই সকল ওষুধ গুলিকে চারটি ভাগে (Category) বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে।
- Stimulants: Stimulants-ভিত্তিক ঔষধ আপনার বিপাক এবং শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই বড়িগুলি সাধারণত যারা দ্রুত ওজন কমাতে চায় তাদের জন্য সুপারিশ করা হয়।
- Appetite suppressants: এই ঔষধ আপনার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা আপনাকে কম খেতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- Fat Burners: এই ঔষধ আপনার শরীরকে আরও দ্রুত চর্বি পোড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা আপনাকে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- Carb blockers: এই ঔষধ কার্বোহাইড্রেটের শোষণকে ব্লক করতে পারে, যা আপনাকে কম ক্যালোরি খেতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কোন প্রকার ঔষধ গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। কারণ সঠিক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ না করলে যে কোন পার্শ-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর ওষুধের উপকারিতা ও অপকারিতাঃ
দ্রুত ওজন কমানোর ওষুধগুলি ব্যবহারের নানা সুবিধা রয়েছে, যেমন:
- হজম শক্তির উন্নতি করে
- ক্ষুধা কমে যায়
- শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
- শরীরের চর্বি কমায়
- মানসিক প্রফুল্লতা উন্নত করে
- মানসিক একাগ্রতা বৃদ্ধি
- সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর এই বড়িগুলির উপকারীতার পাশাপাশি সাধারণ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যে গুলির মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, অনিদ্রা এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি প্রভৃতি। সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ না করলে প্রতিক্রিয়া গুলি দেখা দিতে পারে।
দ্রুত ওজন কমানোর ওষুধের সুবিধা ও অসুবিধাঃ
দ্রুত ওজন কমানোর বড়িগুলির কিছু উপকারীতা রয়েছে। তবে পাশাপাশি সেগুলির কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। দ্রুত ওজন কমানোর বড়িগুলির কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা নিম্নে উল্লেখ্যঃ
সুবিধা সমূহ | অসুবিধা সমূহ |
দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে | ব্যয়বহুল |
গ্রহণ করা সহজ | পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে |
সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় | সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে |
পরিশেষে বলা যায় যে, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন নারী-পুরুষ কারো জন্যই ভালো নয়। মেয়েদের শরীর অতিরিক্ত ভারী হয়ে গেলে নানা শারীরিক, মানসিক ও হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় সমূহ প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি আপনার কাঙ্খ্যিত ওজন পেতে পারেন। যে পন্থাগুলি প্রয়োগে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত জ্ঞান না থাকলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেই পদ্ধতি গুলি প্রয়োগের পূর্বে ডাক্তার বা স্বাস্থ্য বিশারদের পরামর্শ গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
রেফারেন্সঃ
[…] মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ওজন … […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ৩। দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ওজন কমানোর… […]
[…] দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ওজন কমানোর খা… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]
[…] ২। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ও ও… […]